মোখা শক্তিশালী হচ্ছে, আসছে ধীরে
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে মোখা। আগামী রোববার এটি কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে আবহাওয়াবিদেরা বলছেন। এর গতিপ্রকৃতির দিকে নজর রাখছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সংস্থাটি এই ঘূর্ণিঝড়ের সর্বশেষ অবস্থা জানাচ্ছে নির্দিষ্ট সময় পরপর। মোখার বর্তমান অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে সঙ্গে কথা বলেছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পার্থ শঙ্কর সাহা।
মোখার গতিপ্রকৃতি এখন যে অবস্থায় আছে, এটি কোথায় ও কখন আঘাত করতে পারে বলে মনে হচ্ছে?
আজিজুর রহমান: এখন পর্যন্ত এর যে অবস্থান, তাতে এটি আগামী রোববার দুপুরের দিকে কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। তবে এর অগ্রভাগের প্রবেশের কারণে আগামীকাল শনিবার সন্ধ্যার পর থেকেই দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল বা কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে। কক্সবাজার অঞ্চলে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
আমরা যে মডেলগুলো এখন দেখছি, তাতে মনে হচ্ছে, টেকনাফের দক্ষিণ দিক দিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র চলে যাবে। যেটা আমাদের সীমানার বাইরে। এটা এখনো পর্যন্ত এ অবস্থায় আছে। তবে এর পরিবর্তন হতে পারে। আগামীকাল আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে।
আপনি দীর্ঘ সময় ধরে আবহাওয়া অধিদপ্তরে আছেন। অন্যান্য ঝড়ের গতিপ্রকৃতির সঙ্গে মোখার মিল বা অমিল কী দেখছেন?
আজিজুর রহমান: এর আগে ঘূর্ণিঝড় সিডর চলে গিয়েছিল আমাদের বরগুনা বা পাথরঘাটা অংশ দিয়ে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের মাঝবরাবর দিয়ে এটি চলে যায়। আর মাঝবরাবর দিয়ে যাওয়ার জন্য ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছিল। সিডরের চেয়ে মোখার তীব্রতা যদি বেশিও হয়, তাহলে একটি বিষয় বিবেচনা করতে হবে যে এবারের ঘূর্ণিঝড়ের শরীরের ৫০ শতাংশ চলে যাচ্ছে মিয়ানমারে। আর বাকিটা থাকছে বাংলাদেশে। আমরা পাচ্ছি ঘূর্ণিঝড়ের বাঁ দিকটা। ঘূর্ণঝড়ের বাঁ দিকের তীব্রতা ডান দিকের তুলনায় কম থাকে সাধারণত। যেখান দিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র যায়, সেখানে ক্ষতি বেশি হয়। এরপর থাকে ডান দিকে, পরে বাঁ। একটা উদাহরণ দিই, ধরুন, কেন্দ্র যদি টেকনাফ দিয়ে চলে যায়, তবে টেকনাফে ঝড়ের তীব্রতা বেশি হবে। ক্ষতির দিক থেকে টেকনাফকে যদি ২০ নম্বর দেওয়া হয়, তবে এর নিচে আকিয়াব বা মিয়ানমার উপকূলকে দিতে হবে ১৯ নম্বর। টেকনাফের ওপরে কক্সবাজারকে দিতে হবে ১৮ নম্বর। ব্যাপারটা এমন।
ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে একটি চোখ থাকার কথা বলা হয়। এটি কি হয়েছে?
আজিজুর রহমান: ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের একটি অংশ শূন্য হয়ে যায়। এটিকে আমরা চোখ বলি। মোখায় এখনো চোখ তৈরি হয়নি। চোখ হলে সেই এলাকাটি মেঘমুক্ত হয়ে যায়। মোখার আকারের পরিবর্তন হয়েছে। আগে এটি সেন্টার ডেন্স ওভারকাস্ট বা সিডিইউ আকারে ছিল। এই অবস্থায় মেঘগুলো থাকে ভাঙা ভাঙা। এখন এটি বেঁকে গেছে। এই বেঁকে যাওয়ার অর্থ হলো, এখানে বাতাসের ঘূর্ণন বৃদ্ধি পায়। কেন্দ্রে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। অগ্রভাগে বজ্রপাত ও বৃষ্টিপাত বেশি হয়।
এখন মোখার কেন্দ্রের ব্যাস বাড়ছে। প্রথমে এটি ছিল নিম্নচাপ। তখন এর কেন্দ্রের ব্যাস ছিল ৪০ কিলোমিটার। পরে গভীর নিম্নচাপের সময় ব্যাস ৪৮ কিলোমিটার হয়ে গেছে। এখন এটি ৭৪ কিলোমিটার হয়ে গেছে। এটি বাড়ছে। আরও বাড়বে কি না, তা এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। পুরো ঘূর্ণিঝড়টির এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের পরিধির বিস্তার ৫০০ থেকে ৬০০ কিলোমিটার।
তার মানে মোখা বেশি বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া নিয়ে আসবে?
আজিজুর রহমান: একটি ঘূর্ণিঝড়ের একটি কেন্দ্র থাকে, এর পরিপার্শ্ব থাকে। সেই পরিপার্শ্বে প্রবল বৃষ্টি, দমকা থেকে ঝোড়ো হাওয়া, বজ্রবৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস থাকে। এগুলো একটি ঘূর্ণিঝড় বহন করে নিয়ে আসে। মোখাও প্রবল বৃষ্টিপাত, জলোচ্ছ্বাস, ঝোড়ো হাওয়া, বজ্রসহ বৃষ্টি বয়ে নিয়ে আসছে। অন্তত এখন এর বৈশিষ্ট্য দেখে তা বলা যায়।
মোখার এগোনোর গতি কেমন? শুরুতে এর গতি তো বেশি ছিল, এখন কমে এল কেন?
আজিজুর রহমান: শুরুতে ঘূর্ণিঝড়ের এগোনোর গতি ছিল ১৪ থেকে ১৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়, এখন ৮ কিলোমিটার হয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় তিন ধরনের হয়। কখনো দ্রুতগতির হয়, কখনো ধীর হয়, আবার কখনো স্থির হয়ে যায়। এখন এটি ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। এর মাধ্যমে মূলত এর শক্তি সঞ্চয় হয়েছে এবং হচ্ছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে এটি ছিল ঘূর্ণিঝড়, পরে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হয়ে যায় গতকাল রাতেই। আজ এটি হয়ে উঠেছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়। ধীর হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতেই শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ পেয়েছে।
সূত্র: প্রথম আলো
E/N