মৈশাদিতে নিজ অর্থে বাড়ী করেও নির্যাতন ও হুমকীর শিকার প্রবাসী পরিবার
পপুলার বিডিনিউজ রিপোর্ট চাঁদপুর
Link Copied!
চাঁদপুর সদর উপজেলার মৈশাদী ইউনিয়নের উত্তর মৈশাদী গ্রামে নিজস্ব অর্থায়নে বাড়ি নির্মাণ করেও নির্যাতন, হুমকি ও ধমকি শিকার প্রবাসী জাকির তালুকদার ও তার স্ত্রী সন্তান। আর এই অভিযোগ তারই আপন বড় ভাই জহির তালুকদার এর বিরুদ্ধে। ভাইদের মধ্যে বিবেদ সৃষ্টির মোলহোতা হচ্ছেন পরিবারের ছোট ভাই শিপন তালুকদার। এমন তথ্য দিলেন ভাইদের মধ্যে তৃতীয় বাদল তালুকদার।
সোমবার (১১ নভেম্বর) জাকিরের স্ত্রী আক্তার চাঁদপুর মডেল থানায় চারজনকে বিবাদী করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে বিকেলে সরেজমিন ওই বাড়ীতে গিয়ে কথা হয় প্রবাসী জাকির হোসেন এর স্ত্রী আসমা আক্তার ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে।
তাদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, মৃত ইউসুফ তালুকদারের ৫ ছেলে ৩ মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছে, এর মধ্যে ছেলেরা বাড়ীতে বসবাস করেন। ছেলেদের মধ্যে বড়জন অনেকটা মানসিক প্রতিবন্ধী। দ্বিতীয়জন জহির গাড়ী চালক। ঢাকায় চাকরি করেন। তৃতীয় জন প্রবাস ফেরত বাদল। এখন বাড়িতে থাকেন। চতুথজন জাকির জাপানে থাকেন। ছোট জন শিপন বাড়িতে থাকেন এবং তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।
ওই বাড়িতে ইউসুফ তালুকদারের পৈত্রিক সম্পতি ১০ শতাংশ। বাকি সম্পত্তি ছেলেরা ক্রয় করেছেন। কিন্তু তাদের পৈত্রিক ও ক্রয়কৃত সম্পত্তি এখন পর্যন্ত বন্টক হয়নি। যে কারণে সবার সুবিধামত ভোগ করে আসছেন।
প্রবাসি জাকির মুঠোফোনে জানান, তিনি এক সময় সৌদি আরবে থাকতেন। বর্তমানে জাপানে আছেন। তিনি ও তার ভাইদের মধ্যে এক সময় সম্পর্ক ভালো ছিল। তিনি বাড়ীতে পৈত্রিক ও ক্রয়কৃত ৪ শতাংশ জমির মধ্যে ৩ তলা ফাউন্ডেশন নিয়ে বাড়ি তৈরী করেছেন। বর্তমানে একতলার কাজ সম্পন্ন। কিন্তু এই বাড়ি নির্মাণের সময় কাজ দেখাশুনা করেছেন বড় ভাই জহির। আপন ভাই হওয়ার কারণে একতলা বাড়ির পূর্ব পাশে থাকেন জহির এবং আরেকপাশে থাকতেন জাকিরের স্ত্রী সন্তান। কিন্তু নিজেদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির কারণে জাকিরের স্ত্রীর ওপর নানাভাবে নির্যাতন করেন জহির ও তার স্ত্রী সন্তানরা। কয়েকবার তারা জাকিরের স্ত্রীর অংশে তালা দিয়ে দেয়। এই নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়।
জাকিরের বোন শাহনাজ বলেন ছয় মাস পূর্বে জাকিরের ঘরের ওই রুম তালা ঝুলিয়ে দেন তার ভাইয়েরা, এসব বিষয় নিয়ে পারিবারিকভাবে বহু ধেন দরবার হয়, কিন্তু কোন সমাধান হয়নি। গতকাল আমি এসে তালা খুলে দিয়েছিলাম কিন্তু কিছুক্ষণ পর আমার ভাই জহিরের মেয়ে নুসরাত এসে আবার পুনরায় তালা মেরে দেয়। আমার ভাই জহির, তার স্ত্রী সন্তান, ছোট ভাই শিপন ও আমার মাসহ তারা একজোট। মায়ের বয়স অনেক। মাকেও ভুল বুঝানো হয়। যে কারণে জাকিরের স্ত্রীকে বাড়ি তৈরীর পর থেকে নানা ভাবে মানিসক নির্যাতনের মধ্যে রাখছে তারা। জাকিরের ৩ সন্তান নিয়ে তার স্ত্রী আছমা প্রতিনিয়ত অনেক হয়রানির শিকার হচ্ছে।
মূলত ভাইদের মধ্যে মিলেমিশে থাকায় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন জহির ও শিপন। তারা গ্রাম্য শালিশও মানে না।
জাকিরের তৃতীয় ভাই বাদল তালুকদার বলেন, আমাদের ভাইদের মধ্যে কেউ কাউরে মানে না। যে কারণে আমাদের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে। আমি তাদের কোন বিষয়ে কথা বলতে আসলে আমাকেও হুমকি ধমকি দেয়। এসব বিষয়ে নিজেরাই বসে সমাধান করা প্রয়োজন। আর যদি জহির ও শিপন কারো কথা না শুনে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করাই উচিৎ।
জাকিরের স্ত্রী আসমা আক্তার বলেন, দীর্ঘদিন জহির ও তার পরিবারের সদস্যদের হাতে আমি নির্যাতিত। যে কারণে আমি আজ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি। পুলিশ এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উভয় পক্ষের সাথে কথা বলেছেন। আমার স্বামী নিজের অর্থ খরচ করে বাড়ি করেছেন। কিন্তু আমরা তাদের অত্যাচারে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছি না। আমার স্বামী প্রবাসে থাকার কারণে গ্যাস সংযোগের জন্য টাকা দেয় সেই টাকা দিয়ে আমার ভাসুর জহির তিনি তার নামে গ্যাস সংযোগ নিয়ে আসেন। সবকিছুতেই তাদের প্রভাব ও প্রতিনিয়ত আমার স্বামী ও আমাকে হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছে এবং আমাদের কাছ থেকে পঞ্চাশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করতেছে যদি টাকা না দেই তাহলে আমার স্বামীকে,আমাকে ও সন্তানদেরকে মেরে লাশ গুম করে ফেলবে বলেও হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।আমি এই বিষয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা কামনা করছি।
তিনি আরও বলেন, ঘর নির্মাণ করার সময় জহির তালুকদার ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন দাবী করছেন। এটি সত্য না। কিন্তু তিনি কাজ দেখাশুনা করেছেন। পরে তিনি নিজে আরেকটি ঘর নির্মাণও করেছেন। সেখানে তার স্ত্রী ও সন্তান এবং আমার শাশুড়ি থাকেন। ওই ঘর নির্মাণের পরেও আমাদের সাথে সমস্যা সৃষ্টি করছেন।
এদিকে জহির তালুকদার তার প্রবাসী ভাই জাকিরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছন। এর পরে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তার অভিযোগের বিষয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে সত্যতা পাননি। ২০২৩ সালের ১১ জানুয়ারিতে দেয়া পুলিশ তদন্তের একাংশে অভিযোগকারী জহিরকে সম্পত্তিগত বিষয়ে আদালতের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দেন তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা।
এই বিষয়ে কথা বলার জন্য জহির তালুকদারকে তার ঘরে পাওয়া যায়নি। তার নতুন করে নির্মাণ করা ঘরে স্ত্রী ও সন্তানদের পাওয়া যায়।