সামাজিক দূরত্ব না শারীরিক দূরত্ব
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে জোরেশোরে বলা হচ্ছে সামাজিক দূরত্বের কথা। কিন্তু একজন বিশেষজ্ঞ বলছেন, এই শব্দগুলো মানুষের মনে ভুল ধারণার জন্ম দিচ্ছে, যা এত বড় একটি বিপর্যয় ঠেকানোর ক্ষেত্রে হিতে বিপরীতও হতে পারে।
খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বিষয়টির সঙ্গে একমত হয়েছে, সম্প্রতি তারাও সামাজিক দূরত্ব কথাটি পরিহার করার ঘোষণা দিয়েছে। তারা এখন বলছে ‘সামাজিক দূরত্ব’ নয়, করোনা ঠেকাতে বজায় রাখতে হবে ‘শারীরিক দূরত্ব’।
যদিও এত দিন বিভিন্ন দেশের সরকার থেকে শুরু করে গণমাধ্যম, এমনকি অনলাইন মিম নির্মাতা পর্যন্ত সকলেই করোনা মহামারি প্রতিরোধে ‘সামাজিক দূরত্ব’ ধারণাটি আত্মস্থ করে ফেলেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেনিয়েল অলড্রিচ বলছেন যে, এই শব্দবন্ধটি মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করছে। করোনাভাইরাস ঠেকাতে বরং সামাজিক বন্ধন আরও সুদৃঢ় করা প্রয়োজন, এবং তা শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেই সম্ভব।
এক টুইট বার্তায় করোনা আক্রান্ত বয়স্ক প্রতিবেশীদের সাহায্যে এগিয়ে আসা তরুণদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, তারা সামাজিক যোগাযোগের চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে। আর দুর্যোগ মোকাবিলায় এ ধরনের সামাজিক বন্ধনের বিকল্প নেই। যে কোনো যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মহামারি মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ এবং সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন হয়। সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বললে তা মানুষকে এ ধরনের কাজে এগিয়ে আসতে নিরুৎসাহিত করবে।
তার কথার যুক্তি অনুধাবন করে এরই মধ্যে বিভিন্ন স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ তাদের ভাষা পরিবর্তন করতে শুরু করেছে। ২০ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহামারি বিশেষজ্ঞ মারিয়া ভ্যান কারখোভ জানান, সংস্থাটি সচেতনভাবে সামাজিক দূরত্ব শব্দবন্ধটির বদলে এখন থেকে শারীরিক দূরত্ব ব্যবহার করবে।
অলড্রিচের মতে, সামাজিক দূরত্ব চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি পরিভাষা, যা আসলে ছোঁয়াচে রোগ প্রতিহত করতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার কথাই বুঝিয়েছে। কিন্তু অনেকেই হয়তো ভাবছেন এই দুর্যোগে সব সামাজিক সম্পর্কে দেয়াল তুলতে বলা হচ্ছে বুঝি। কিন্তু বরং উল্টোটাই এখন করতে হবে। যেহেতু কোভিড-১৯ রোগটি সহসাই পৃথিবী থেকে দূর হচ্ছে না, আমাদের দীর্ঘ সময় ধরেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকতে হবে। কিন্তু এত দিন ধরে সামাজিক মেলামেশা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে তা সমাজব্যবস্থাকেই ঝুঁকির মুখে ফেলে দেবে। ফোন কিংবা অনলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে হয়তো মানুষ বিচ্ছিন্নতা কিছুটা এড়াতে পারছে, কিন্তু সেটা সবার জন্য কতটা প্রযোজ্য তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অলড্রিচ।