করোনা চিকিৎসায় আশার আলো ‘ব্লাড-প্লাজমা থেরাপি’
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ঘুম নেই বিশ্বের গবেষকদের। ভ্যাকসিন আবিষ্কার থেকে শুরু করে চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে একের পর এক গবেষণা করে যাচ্ছেন তারা।
এবার যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় নতুন পদ্ধতির কথা জানিয়েছেন। ‘ব্লাড-প্লাজমা থেরাপি’ নামে নতুন এই পদ্ধতি নিয়ে করোনা চিকিৎসায় আশার আলো দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্কে সম্প্রচারিত ‘লো ডবস টুনাইট’ নামের চ্যাট শো’তে নতুন এই থেরাপির কথা জানিয়েছেন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ইয়ান লিপকিন।
কভিড-১৯ প্রতিরোধে নতুন উপায় আবিষ্কারে জানুয়ারিতে তিনি চীন ভ্রমণ করেছিলেন। সেখান থেকে সম্প্রতি একটি গবেষণা পেয়েছেন, যাতে দেখা গেছে, রোগীরা প্লাজমা থেরাপি চিকিৎসায় সফল হয়েছেন।
নিউরোলজি ও প্যাথলজি বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে আমি এক বন্ধু, যিনি একজন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী, তার কাছ থেকে একটি গবেষণাপত্র পেয়েছি। যাতে দেখা যায়, প্লাজমা থেরাপি নিয়ে ১০ রোগীর চিকিৎসা করা হয়। এ পদ্ধতিতে করোনা রোগে সেরে ওঠা ব্যক্তির কাছ থেকে অ্যান্টিবডি নেওয়া হয়। ওই ১০ জনের ক্ষেত্রেই তা কাজ করেছিল। তারা এখন ভালো আছেন।’
ইয়ান লিপকিন জানান, তবে এই পদ্ধতি একেবারে নতুন নয়। অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের আগে এটি ব্যবহার করা হতো। এখন করোনা চিকিৎসাও কাজ করেছে।
ইতিমধ্যে নিউইয়র্কে ব্লাড-প্লাজমা থেরাপি নিয়ে পরীক্ষা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
এই মার্কিন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ভাইরাস থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান করা হবে, স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে তারা যাতে প্লাজমা দান করেন। তাহলে আক্রান্ত অন্যান্য ব্যক্তির চিকিৎসায় আমরা এটি ব্যবহার করতে পারে। বিষয়টি অসুস্থতা ও মৃত্যুর ক্ষেত্রে বিশাল পার্থক্য তৈরি করে দিতে পারে।
এক ব্যক্তির কাছ থেকে গৃহীত প্লাজমা দিয়ে তিনজন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব বলে তিনি দাবি করেন। গবেষণা করে বিষয়টি দেখা গেছে। ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত আক্রান্তদের সুস্থ করে তুলতে এটি কার্যকর সমাধান হতে পারে।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, করোনা প্রতিরোধে ২০টি ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চলছে। এরই মধ্যে কিছু ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়ে গেছে। কভিড–১৯–এর জিন সিকোয়েন্স তৈরির মাত্র ৬০ দিনের মাথায় এসব ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে।
তবে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য গবেষণা শেষে একটি নিরাপদ ওষুধ তৈরি করতে ১৮ মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।
গত ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে কভিড-১৯। এর মধ্যে বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছে ৫ লাখ ৩১ হাজার মানুষ। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে সাড়ে ২৪ হাজার জনের। তবে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে এক লাখ ২২ হাজার মানুষ।
সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে ইতালিতে। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ৮ হাজার ২১১। এরপর স্পেনে মারা গেছে ৪ হাজার ৩৬৫ জন। চীনে মারা গেছে ৩ হাজার ২৯১ জন।
গত আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যায় এগিয়ে ছিল চীন। দেশটিতে সংক্রমণ থেমে যাওয়ায় ভাইরাসটির নতুন কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায় ইউরোপ। ফলে গত কয়েক দিনে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে গেছে ইতালি ও স্পেন।