আন্দোলনে বিজিবির গুলিতে পঙ্গু নাঈমের মানবেতর জীবনযাপন
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে নিহতের সংখ্যা দেড় হাজারেন অধিক হলেও, আহতের সংখ্যা প্রায় ২২ থেকে ২৫ হাজার বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বাস্থ্য বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি।
আন্দোলনে অংশনেয়া একজন, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মমীপুর গ্রামের নাঈম ইসলাম মোল্লা। তার বাবা একজন কৃষক। দুই ভাইএর মধ্যে সে ছোট। পড়াশোনা করেন নারায়নগঞ্জ সরকারি তোলারাম ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি ২য় বর্ষে। পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টাইম চাকরি করতেন ঢাকা বনশ্রী একটি ফার্মেসিতে। নিযের খরচের পাশাপাশি পরিবারের খরচ মেটানোর চেষ্টা করতেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে বিজিবির গুলিতে হয়েছেন পঙ্গু! পড়াশোনাও বন্ধ, ভেঙ্গে পড়েছেন এমন পরিস্থিতিতে।
প্রতিবেশি সাকিব বলেন, নাঈম সম্পর্কে আমার ভাতিজা হয়। আমরা একই বাড়ির, সে ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বনশ্রীতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রণ করে। বিজিবির গুলিতে তার বাম ‘পা’তে লাগে, তৎক্ষণিক সে আহত হয়ে পড়েযায়। তার বন্ধুরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা খরচ হয়েছে। কিছু সহযোগিতা পেয়েছে। বাবা কৃষক হিসেবে খরচ চালাতে হিমসিম খাচ্ছে। নাঈম পা নিয়ে অনেক কষ্টে দিন পার করছে। তাদের মত যারা আছে, এদের জন্য আমরা সকলে এগিয়ে আসা উচিত। বিত্তবানরা যদি সহযোগিতা করে তাহলে তার পরিবার অনেক উপকৃত হবে।
নাঈমের বাবা বলেন, আমি একজন কৃষক, আমার দুই ছেলে, ছোট ছেলে আন্দোলনে গিয়ে গুলি খেয়ে আজ সে পঙ্গু হয়ে পড়ে আছে। আমি কৃষি কাজ করে সংসার চালাতে হয়। এখন পর্যন্ত দুই লক্ষটাকার উপরে খরচ হয়েছে। ছেলেটাও কষ্ট পাচ্ছে। চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন।
তার মা বলেন, নাঈম নারায়নগঞ্জে পড়াশোনা করতো, তার খালার কাছে থাকতো, ছোট একটা চাকরিও করতো, মোটামুটি চলতো। আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে আজ পুরো পঙ্গু হয়েগেছে। আমরা মধ্যবিত্ত পরিবার, তার বাবা কৃষিকাজ করে, তার চিকিৎসার খরচ পরিবারের খরচ সবমিলিয়ে কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে।
নাঈম বলেন, ১৯ জুলাই আমি বনশ্রীতে অংশনেই, প্রথমদিন যখন আন্দোলন করি, তখন বিজিবি আমাকে লক্ষকরে গুলি ছুড়ে, গুলি লেগে আমার বাম পায়ের একদিক দিয়ে ঢুকে অন্যদিক দিয়ে ঢুকে পায়ের হাড় ভেঙ্গে যায়। সাথে থাকা আমার বন্ধু আমাকে পাশের একটি হাসপাতারে নিয়ে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পঙ্গুতে নিয়ে যেতে বলে। পঙ্গুতে আমার পায়ে একটা রিং লাগায়। পরে বাসায় নিয়ে আসে, এর মধ্যে আমার নামে মামলাও হয়। পরে বাসা থেকে মুগদা মেডিকেলে চিকিৎসা নেই। তার পরে যেতেহয় মনোয়ারা অর্থোপেডিক মেডিকেলে। গত চার আগস্ট পায়ে প্লাস্টিক সার্জারি ও অপারেশন করা হয়। পাঁচ আগস্ট আলহামদুল্লিাহ আমরা বিজয় লাভ করি। ছয় অক্টোবর আমাকে রিলিজ দেওয়া হয়। ২৩ আগস্ট সিএমএসে চিকিৎসার জন্য যাই। ২৪ আগস্ট কিছু পরিক্ষা করে ঔষধ দেয়। একমাস পরে ভর্তি দেয়। সেখানে রিং খোলে নতুন করে রিং লাগায়। সিএমএসে নাহিদ ভাই আর আসিফ ভাই দেখে গেছে। সেনাপ্রধান স্যার প্রতি শনিবারে এসে দেখে যেতে। ৫ আগস্টের আগে আমার প্রায় দুই লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। আস-সুন্না ফাউন্ডেশন ও জামায়াত শিবিরের পক্ষ থেকে কিছুটা খরচ পেয়েছি। এছাড়া সাবেক এমপি লায়ন হারুন কিছু খরচ দিয়েছে। সব মিলিয়ে ৭০ হাজার টাকার মত পেয়েছি। বর্তমানেও অনেক খরচ হচ্ছে। পা’ নিয়ে অনেক কষ্টে দিনকাল কাটাতে হচ্ছে।