গরমে চা, কফি বা কোমল পানীয় কম খাবেন কেন?
প্রচন্ড গরমে যেখানে জনজীবন অতিষ্ঠ, সেখানে ভুল খাবার গ্রহণের কারণে হতে পারে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি। তাই স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে এই গরমে প্রশান্তির জন্য সঠিক সময়ে সঠিক খাবার গ্রহণ করা খুবই জরুরি। বর্তমানে তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উপরে থাকছে। ফলে শরীর থেকে পানি ঘামের মাধ্যমে বের হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর অতিরিক্ত ঘামের সাথে সঙ্গে আমাদের শরীর থেকে বেশি পরিমাণে লবণ বের হয়ে যাচ্ছে। ফলে ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স হয়ে বাড়ছে বিভিন্ন রকম স্বাস্থ্যঝুঁকি। তাই শরীর সুস্থ রাখতে কিছু বিষয় অবশ্যই মানতে হবে।
১. গরমে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। স্বাভাবিক সময়ে আমরা প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করতে বলি। কিন্তু পেশাভেদে, পরিশ্রম হিসাব করে বা ঘামের পরিমাণ বিবেচনা করে প্রতিদিন প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন লিটার বা ক্ষেত্রবিশেষে তার থেকেও বেশি পানি পান করতে হবে। তবে কিডনি রোগীর ক্ষেত্রে চিকিৎসকের অনুমতি সাপেক্ষে পানি গ্রহণ করতে হবে।
২. পানির পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানিজাতীয় খাবার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। লেবু পানি, জিরা পানি, পুদিনা পাতা দিয়ে বিভিন্ন রকম শরবত, আখের রস, বেল, পেঁপে, বাঙ্গি, তরমুজসহ বিভিন্ন রকম মৌসুমি ফলের শরবত বা জুস ইত্যাদি। তবে ফলের জুসের তুলনায় গোটা ফলটি খেতে পারলে বেশি ফাইবার বা পুষ্টি পাওয়া যায়। তাই প্রচুর পরিমাণে মৌসুমি ফল খেতে হবে। গ্রীষ্মকালে অনেক ধরনের মৌসুমি ফল পাওয়া যায় যেমন– তরমুজ, বাঙ্গি, আনারস, বেল, কাঁচা আম, লেবু ইত্যাদি।
৩. গ্রীষ্মকালে রান্নায় বৈচিত্র্য আনতে হবে। গরমের দিন প্রচুর মসলাযুক্ত ও গুরুপাক খাবার না খাওয়া ভালো। অল্প তেল মসলা দিয়ে পাতলা ঝোল করে তরকারি রান্না করলে শরীরের জন্য উপকারী। গরমে অনেকের খাবারের রুচি থাকে না। সে ক্ষেত্রে শুক্তো বা তিতা তরকারি অথবা তরকারিতে টক দিয়ে রান্না করলে, খাবারের রুচি বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া বিভিন্ন রকম শাকের পাশাপাশি সবজির মধ্যে পেঁপে, লাউ, শসা, চাল কুমড়া, সোজিনা ডাটা, চিচিঙ্গা, ঝিঙা, পটল, ধুন্দুল ইত্যাদি সহজে হজমযোগ্য খাবার।
৪. যেহেতু রান্না খাবারে পুষ্টি অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। তাই শাক–সবজির পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে সালাদ খেতে হবে। যেমন: নাস্তার সময় বা স্নাক্স আইটেম হিসাবে ফ্রুট সালাদ খাওয়া ভালো। আবার ডিনারে অতিরিক্ত ভাজাপোড়া বা তৈলাক্ত খাবার না খেয়ে বিভিন্ন রকমের চিকেন বা ফিস সালাদ ও ভেজিটেবল স্যুপ ধরনের খাবার রাখা যায়।
৫. এই সময় চা, কফি ও বাজারে পাওয়া কোমল পানীয় পান করা কমাতে হবে। সম্ভব হলে বাদ দেওয়াই ভালো। অতিরিক্ত চা, কফি বা কোমল পানীয় আমাদের শরীরকে ডিহাইড্রেট করে। ফলে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পানি বের হয়ে যায়। আবার ঠান্ডা কোমল পানীয় সাময়িক প্রশান্তি দিলেও পানির চাহিদা পূরণে তেমন কোনো ভূমিকা পালন করে না। বরং কোমল পানীয়তে থাকা চিনি বিভিন্ন রকম স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
৬. খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং সংরক্ষণের ব্যাপারে আরও সতর্ক হতে হবে। এই গরমে প্রায়ই ডায়রিয়া, কলেরা, ফুড পয়জনিং বা খাবার হজমে নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই রান্না থেকে শুরু করে খাবার খাওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন খাবার খেতে হবে এবং খাবার সংরক্ষণের ব্যাপারে বাড়তি নিরাপত্তা বিধান করতে হবে।