বিথী নন্দীর কবিতা -স্বজাত শত্রু/ মধ্যবিত্ত
বিথী নন্দী
Link Copied!
স্বজাত শত্রু
আদালতে রায় দিবে আজ, নির্যাতিতা রোহিনী।
চারিদিকে থমথমে নীরবতা ;
রোহিনীর চোখে অশ্রু, সে অশ্রুর উপকরণ হলো,
“তেল-মশলা, অপমান, টিজিং, শো পিস করে রাখার ব্যর্থ প্রচেষ্টার প্রমাণ”
ওর মুষ্টিবদ্ধ হাতে বন্দী হয়ে আছে গ্লানি,
বাবা মায়ের অক্ষমতা যৌতুক প্রদানের ।
ওর রুক্ষ চুলে জমে আছে হেরে যাওয়া
একটি জীবনের গল্প,
ওর ছেঁড়া বিবর্ণ জামাকাপড়ে লেগে আছে
চিৎকার আর স্বপ্ন ভাঙার আর্তনাদ।
ওর পায়ের কাছে জমাট বাঁধা রক্তে লেগে আছে
ওর সম্মানহানির দাগ, ওর আধখোলা চুলের
খোঁপার ভাঁজে ভাঁজে জড়িয়ে আছে
এক জীবনের হাসি আনন্দের কবর।
উকিলের তর্কাতর্কি চলছে সদ্য তোলা
কাগজের বানী নিয়ে ওর চোখের বিষন্নতা
আর ওর অসহায়তা কারো চোখেই পড়লো না।
স্রষ্টার কাছে ও আনমনে জানাচ্ছিলো অভিযোগ৷
সময় শেষে রায় দেবার পূর্বে বিচারক বললেন,
পুরুষ নামক তকমার আড়ালে আজীবন নারী-ই নস্ট করবে নারীর সম্মান।
আর সমাজ একে মেনে নিবে নিয়ম হিসেবে।
মধ্যবিত্ত (২)
বুকপকেটে জমানো খুচরো আবেগ ;
মাস শেষে খালি মানিব্যাগটা জুড়ে থাকে রক্তজল করা
একটুকরো দীর্ঘশ্বাস।
রোজ মাথায় ঘুরে প্রেমিকার বিশ্বাস;
নিকোটিনের ধোঁয়া উড়ে উদাত্ত আকাশে,
মহাশূন্যের মুগ্ধতায় আমার স্বপ্নেরা হাসে।
শপিংমলের উঁচু তলার দোকানে ঝুলানো
ঝলমলে জামাটায় চোখ আটকে থাকে ;
কাঁধে ঝোলানো পার্সটায় জমানো কিছু টাকা,
সামনের মাসে বাবাকে একটা প্যান্টের পিস
কিনে দিবো বা, মায়ের জন্য শাড়ি কিংবা ভাইয়ের জন্য ঘড়ি।
খুচরো গুনতে গুনতে মাস না পেরুতেই
জমানো টাকা নিঃশেষ হয়ে যায়।
হাসিমুখে মানতে হয় ব্যার্থতা৷
এই টুকরো পাত্রের মত সামর্থ্যের ডালিতে
রোজ কত ব্যর্থ জীবনের গল্প সাজাই;
স্বপ্ন বুনি কত শত রাত শেষে ভোরের আলো
মুচকি হেসে জানান দেয় টানাপোড়েন এর ;
সমাজের হাসি খেলার মাঝে দাঁড়ানো
নির্বাক পথিক আমি মধ্যবিত্ত।।