চাঁদপুরে আধুনিক আবাসন পেয়ে আনন্দিত হরিজন

পপুলার বিডিনিউজ রিপোর্ট চাঁদপুর
আপডেটঃ জুলাই ১১, ২০২৪ | ৭:২১
পপুলার বিডিনিউজ রিপোর্ট চাঁদপুর
আপডেটঃ জুলাই ১১, ২০২৪ | ৭:২১
Link Copied!

চাঁদপুরে প্রথম বারের মত আধুনিক ফ্ল্যাট পাচ্ছেন হরিজন সম্প্রদায়ের ৮৮টি পরিবার।

 

প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ও ইউএনডিপি’র অর্থায়নে এই ফ্ল্যাট তৈরি করা হয়। আধুনিক আবাসন পেয়ে উন্নত জীবনের স্বপ্ন বুনছেন সমাজের পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠির মানুষ। এখান থেকে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্ম আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস হরিজন পল্লীর বাসিন্দাদের।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১০ জুলাই) সকালে প্রাথমিক পর্যায়ে হরিজন সম্প্রদায়ের ১০ জন সদস্যের হাতে ফ্ল্যাটের চাবি তুলে দেন পৌর মেয়র মো. জিল্লুর রহমান।

মোরক ডাকা ভোরে যখন পূর্বের আকাশে উদীত হয় সূর্য, নগরীর অনেকেই তখনো হয়তো ভোরের বয়ে যাওয়া হিমেল হাওয়ায় গায়ে কাঁথায় জড়িয়ে ঘুমে বিভোর। ঠিক তখনি নগর পরিস্কারের যুদ্ধে নেমে পড়ে একদল মানুষ। সমাজে যারা পরিচিত হরিজন কিংবা পরিচ্ছন্নতা কর্মী নামে।

মহাসড়ক থেকে অলিগলি ও মার্কেট থেকে বাসা বাড়ি সকল স্থানের ময়লা-আবর্জনা ঝাঁড় দিয়ে পরিস্কার করে তোলে প্রকৃতি।আগের দিনের ময়লা-আবর্জনায় এটো করে রাখা শহর হয়ে ওঠে পরিস্কার ঝলমলে। সমাজের সকল ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করে পরিবেশ আলো ঝলমলে করে তুললেও নিজেদের জীবনটা অন্ধকারে ঘেরা। দিন দিন সমাজ কিংবা রাষ্ট্র সামনে এগুলেও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাবে তাদের যাত্রা আরো পশ্চাতে। তবে আশারবাণী হচ্ছে প্রান্তিক এসব মানুষের জীবন মান উন্নয়নে কাজ করছে সরকার।

বিজ্ঞাপন

চাঁদপুর শহরের স্বর্ণখোলা রোড এলাকার হরিজন দম্পতি জুনু ও রজনী রানী। বংশ পরম্পরায় করে আসছেন পরিচ্ছন্নতার কাজ। খুব ভোরে তৈরি হয়ে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন ময়লা সংগ্রহের কাজে। শহরের অলিগলি ধরে বাঁশি ফুঁকে সংগ্রহ করেন ময়লা-আবর্জনা।

উঁচু-উঁচু সব ভবন দেখে মনের কোনে জমে হাহাকার- সমাজ পরিস্কারের কাজ করলেও নিজেদের বসবাসের জন্য নেই কোন পরিস্কার স্থান। পৌরসভার দেওয়া ফ্ল্যাট পেয়ে গুছেছে আজন্ম সেই আক্ষেপ। স্বপ্ন বুনছেন উন্নত পরিবেশে বসবাস করে স্মার্ট বাংলাদেশের উপযোগি করে ছেলে-মেয়েদের গড়ে তোলার।

 

জুনু হরিজন ও তার স্ত্রী রজনী রানী বলেন, আমাদের বাবা, দাদা থেকে শুরু করে বংশ পরম্পরায় পরিচ্ছন্নতার কাজ করে আসছি। কিন্তু কখনো ভাবিনি নিজেদের থাকার জন্য এমন ঘর পাবো। আমরা অনেক খুশি। ছেলে মেয়েদের ভালোমত লেখাপড়া করিয়ে মানুষ করতে চাই। যেন ভবিষ্যতে এই পেশায় না থেকে ভালো কিছু করতে পারে। পুকুর লাগোয়া প্রায় ২৫ শতাংশ জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে পাশাপাশি ৫তলা বিশিষ্ট দুটি ভবন। পরিবেশ বান্ধব ব্লকে তৈরি আধুনিক এই ভবনের নান্দনিক ডিজাইন মন কাড়বে যে কারো। দূর থেকে তাকালে মনে হতে পারে ইউরোপ কিংবা উন্নত বিশ্বের কোন বাস ভবন। এমন দৃষ্টিনন্দন ভবন দুটি তৈরি করা হয়েছে হরিজন পল্লীর বাসিন্দাদের জন্য। যাতে রয়েছে ৮৮টি ফ্ল্যাট। প্রতিটি ফ্ল্যাটে রয়েছে একটি করে বসবাসের রুম, টয়লেট ও রান্নঘর। প্রতিটি ভবনের নিচতলায় রয়েছে অনুষ্ঠান করার জন্য কমন স্পেস।

জুনু হরিজন কিংবা রজনী রানী নয়। আধুনিক এমন ফ্ল্যাটের মালিক হয়ে খুশিতে আত্মহারা আরো অনেকেই। স্বাস্থ্যকর পরিবেশে ছেলে-মেয়েদের আরো উন্নত জীবন গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর হরিজন পরিবারগুলো। তবে ফ্ল্যাটে বসবাসের জায়গার কিছুটা স্বল্পতার কথা বলছেন কেউ কেউ।

জনি হরিজন বলেন, ফ্ল্যাট পেয়ে আমরা খুশি। তবে থাকার জায়গা কম। একটা মাত্র রুম তাও আবার ছোট। যেখানে পরিবার নিয়ে থাকা অনেক কষ্টকর। এর সমাধান করা প্রয়োজন।

চাঁদপুর পৌর মেয়র মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, আজকে ১০ জনের মাঝে ফ্ল্যাটের চাবি তুলে দেয়া হলো। খুব সহসায় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে সকলের মাঝে ফ্ল্যাটের কাগজ পত্র হস্তান্তর করা হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অবদান আপনাদের এই আধুনিক বাসস্থান।

তিনি বলেন, এটা সত্যি বরাদ্দকৃত ফ্ল্যাটগুলোর আয়াতন কম। এতে আমাদের পৌরসভার কোন হাত ছিল না। এটি প্রজেক্ট ডিপার্টমেন্টের কাজ। তবে আমরা পরিবারের সদস্য সংখ্যা দেখে পাশাপাশি একাধিক ফ্ল্যাট বরাদ্দ দিয়েছি। যা করে তাদের বসবাসে সমস্যা না হয়। ভবিষ্যতে যেসব ভবন নির্মাণ করা হবে, সেখানে এই ডিজাইন পরিবর্তন করা হবে।

মেয়র বলেন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে এই আধুনিক আবাসন ব্যবস্থা। জীবন যাপনের পরিবেশ উন্নয়নের পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া এই সমাজের শিশুদের শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে । এসব জনগোষ্ঠিকে এগিয়ে নিতে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন জরুরি বলে জানান তিনি।

লেখন ও গবেষক মুহম্মদ ফরিদ হাসান বলেন, একটি রাষ্ট্র কেমন আছে তা বুঝা যায় সেই রাষ্ট্রের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবন যাত্রার মান দেখে। সরকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হরিজনদের আধুনিক আবাসনের ব্যবস্থা করেছে যা অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এর পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের উপর গুরুত্ব দেয়, তবে সামগ্রিক ভাবে তাদের যেমন উন্নতি হবে, একই সাথে রাষ্ট্রের সম্পদের সুষম বন্টন হবে, রাষ্ট্র আরো এগিয়ে
যাবে।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ও ইউএনডিপি’র অর্থায়নে ভবন দুটি নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালে। প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ৮৮টি ফ্ল্যাট। এছাড়া নতুন আরো দুটি ভবন নির্মাণের কাজ সহসায় শুরু হবে।
চাঁদপুরে প্রায় শতবছর ধরে বসবাস করছে হরিজন সম্প্রদায়ের ৩শতাধিক পরিবার।

ট্যাগ:

শীর্ষ সংবাদ:
হাজীগঞ্জে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরন করলেন ডিসি হাজীগঞ্জে ছেলের ঘুষিতে বাবার মৃত্যু  হাজীগঞ্জে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি সানাউল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক নন্দীতা দাস রাজারগাঁও হায়দার আলী হাজী কোরআনিয়া মাদ্রাসার ২ দিন ব্যাপী মহা সম্মেলন হাইমচরে শীতবস্ত্র পেলেন পাঁচ শতাধিক শীতার্থরা যেই প্রতিবেদনে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় পুরস্কার পেলেন মনিরুজ্জামান বাবলু হাজীগঞ্জে হত্যা মামলায় আওয়ামীলীগ নেতাকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১১ চাঁদপুরে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় পুরস্কার পেলেন ৬ সাংবাদিক হাজীগঞ্জ সাংবাদিক কল্যাণ সমিতির সদস্যের সন্তানদের মাঝে শিক্ষাবৃত্তির চেক প্রদান আজ ছয়জন পাচ্ছেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাংবাদিকতা পুরস্কার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন যুব অধিকার পরিষদের আহবায়ক কমিটি গঠন পাইকদীতে ইসলামী সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় সুরের মুগ্ধতা ছড়াবে জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীরা প্রথমবারের মতো চাঁদপুর প্রেসক্লাব সাংবাদিকতা পুরষ্কার পাচ্ছেন ছয়জন হাজীগঞ্জে ৪০ দিন ফজরের জামায়াতে অংশগ্রহণকারী শিশুদের পুরস্কার বিতরণ বিএনপির সভাপতি হয়ে ফুলেল সংবর্ধনা পেল প্রফেসর কুদ্দুস হাজী ইউনুস মাহমুদকে কুয়েত প্রবাসী অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ঘোষণা বিএনপি ভদ্রতার রাজনীতিতে বিশ্বাসী —- ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক ফুলেল শুভেচছা জানালেন ১ নং ওয়ার্ড বিএনপি শাহরাস্তিতে  উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী উপজেলা সংসদের সম্মেলন হাজীগঞ্জে ইউএনও’র কম্বল বিতরন