লিচু খেয়ে শিশুরা মারা যাচ্ছে কেন !

মে ২৩, ২০২৩ | ৩:৫৭ অপরাহ্ণ
পপুলার বিডিনিউজ ডেস্ক চাঁদপুর , পপুলার বিডিনিউজ

পত্রিকায় মাঝে মাঝে খবর আসে, লিচু খেয়ে শিশুদের মৃত্যু। অনেকে এটা উড়িয়ে দেয়, কারণ লিচু আমাদের পরিচিত ও পছন্দের ফল। তাহলে এটা কি গুজব, নাকি লিচু খেয়ে আসলেই মানুষ মারা যেতে পারে? বিশেষ কিছু পরিস্থিতিতে আসলেই মানুষ মারা যেতে পারে। তার মধ্যে একটা হলো, খালি পেটে যদি কোনো শিশু অনেক লিচু খায়, তাহলে এটা ঘটতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এটার আশঙ্কা খুব কম। বাংলাদেশে রামবুটান পাওয়া যায় আজকাল। সেটা এবং লিচু পরিবারের আরও কিছু ফল আছে, যেগুলি খেলেও এই বিপদ হতে পারে। তবে নিয়মিত খাবারের পর পাকা লিচু খাওয়া নিরাপদ, অন্তত এই লেখায় বর্ণিত রোগের জন্য। কিন্তু কেন এটা ঘটে? এর ছোট উত্তর হলো, কাঁচা লিচুতে এক ধরনের রাসায়নিক থাকে, যা শিশুদের জন্য বিষ। এটা শুধু শিশুদের জন্য বিপদজনক। কারণ তাদের শরীর ছোট, তাই অল্পতেই মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। লিচু খেলে কীভাবে মৃত্যু ঘটতে পারে, তা জানার আগে ডায়াবেটিস, ইনসুলিন আর রক্তের চিনির ব্যাপারে একটু জেনে নিই। রক্তের চিনি সরাসরি আমাদের কোষে ঢুকতে পারে না। মনে করুন, কোষের দেয়ালে একটা তালাবদ্ধ বিশেষ রকমের দরজা আছে। আর শুধু এই দরজা দিয়েই চিনি কোষের ভেতরে ঢুকতে পারে। এই দরজাটার তালা খোলার চাবি হলো ‘ইনসুলিন’ নামে একটা হরমোন। আমাদের প্যানক্রিয়াস বা অগ্নাশয় ইনসুলিন তৈরি করে। ইনসুলিন না পেলে খাবার থেকে হজম প্রক্রিয়ায় তৈরি হওয়া চিনি কোষের ভেতরে ঢুকতে পারে না। যাদের ডায়াবেটিস হয়, তাদের ইনসুলিন কম থাকে, তখন রক্তে চিনি থাকলেও সেটা কোষে ঢুকতে পারে না। তাই রক্তে চিনির পরিমান (Blood Sugar) বেড়ে যায়। সেটা মেপে বোঝা যায় ডায়াবেটিস হয়েছে কি না।   এবার একটা দৃশ্যকল্প ভাবি। বিকাল পাঁচটা বাজে। দবীরউদ্দিন সাহেব সকাল থেকে কিছু খাননি। পেটে যেহেতু খাবার পড়েনি, তার রক্তে তাই চিনির পরিমাণ কম। কিন্তু নার্স এসে তার রক্তে চিনির পরিমাণ না মেপেই তাকে ইনসুলিন ইনজেকশন দিয়ে দিল। বাড়তি ইনসুলিন পেয়ে সব কোষের চিনি-দরজা খুলে গেল, কোষগুলি সব চিনি হজম করে নিল। তার কিছুক্ষণ পর কোষগুলো আর চিনি পাবে না। জ্বালানির অভাবে তারা একে একে কাজ বন্ধ করে দেওয়া শুরু করবে। তখন দুর্বল লাগবে, মাথা ঘুরবে, অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন কেউ কেউ। চিনি এ রকম অস্বাভাবিক কমে যাওয়াকে বলা হয় হাইপোগ্লাইসেমিয়া। হাইপো মানে নিচু বা কম। আর গ্লাইকো মানে যা থেকে চিনি তৈরি হয়। এটাকে ডায়াবেটিক শকও বলা যায়। হাইপোগ্লাইসেমিয়া অন্য কারণেও হতে পারে। যেমন প্রচুর ব্যায়াম করলে, অথবা না খেলে সব চিনি শেষ হয়ে গিয়ে স্বল্পকালীন হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। আবার দবীরউদ্দিন সাহেব ঠিকমত খাওয়ার পর তাকে ভুলে ইনসুলিনের বেশি ডোজ দিয়ে দিলে, কিংবা ভুল সময়ে দিলেও তার হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। এর চিকিৎসা হতে পারে সঙ্গে সঙ্গে চিনি বা গ্লুকোজ খাওয়ানো। সূত্র: প্রথম আলো E/N