বাড়ির ছাদে দৃষ্টিনন্দন বাগান

মে ১০, ২০২৩ | ১২:১১ পূর্বাহ্ণ
শাহরিয়ার নাসের, অতিথি লেখক , পপুলার বিডিনিউজ

বাড়ির ছাদে দৃষ্টিনন্দন এক বাগান। সেখানে আছে নানা প্রজাতির ফুলগাছ। সকাল, বিকাল কিংবা রাত, প্রতিনিয়ত মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। অনেকটা শখের বশে বসতবাড়ির ছাদে দৃষ্টিনন্দন এই বাগান গড়ে তুলেছেন শিক্ষিকা গুলশান আক্তার। চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৫৫ নম্বর কাঁশারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তিনি।  ছোটবেলার শখ পেশায় শিক্ষক হলেও ছোটবেলা থেকেই বাগান করার শখ ছিল স্কুলশিক্ষিকা গুলশান আক্তারের। করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে  স্কুল। বন্ধের সেই সময় বাগানের কাজে ব্যয় করেন তিনি। বৃদ্ধি পেতে থাকে বাগানে গাছের সংখ্যা। পেশাগত ও সাংসারিক ব্যস্ততার মাঝেও নিয়ম করে বাগানে সময় দেন তিনি। নিজ হাতে বাগানের প্রতিটি টবের পরিচর্যা করেন। তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে শিখে নিয়েছেন বাগান পরিচর্যার খুটিনাটি। তিনি বলেন, ‘গাছ লাগানো আমার শখ। ছোটবেলা থেকেই আমি নানা প্রজাতির ফুলগাছ সংগ্রহ করে বাড়ির আশপাশে রোপণ করতাম। ১৯৮৫ সালে আমি চাঁদপুর শহর থেকে গন্ধরাজ ফুলের একটি কলম কিনে এনে বাড়ির পাশে লাগাই। এর আগে আমাদের গ্রামে কোনো গন্ধরাজ গাছ ছিল না।’ ছাদবাগান এখন বৃক্ষের সংগ্রহশালা গুলশান আক্তারের শখের বাগান ছাদ পেরিয়ে এখন বাড়ির আশপাশের জমিতে শোভাবর্ধক নার্সারিতে রূপ নিয়েছে। ছাদবাগান শুরু করার পর ধীরে ধীরে দেশি-বিদেশি বৃক্ষের চারা সংগ্রহ শুরু করেন তিনি। অনলাইনে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ যাচাই করে দেশের বিভিন্ন নার্সারি থেকে নানা জাতের বৃক্ষের চারার সংগ্রহ করে বাগানকে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ করে তুলছেন তিনি। তার সংগ্রহে বিভিন্ন প্রকারের শোভাবর্ধনকারী, ফুল ও শাক-সবজিসহ সব মিলিয়ে প্রায় শতাধিক প্রজাতির সহস্রাধিক উদ্ভিদ রয়েছে। স্বামীর সহযোগিতা  ছাদবাগানের সামগ্রিক কাজে সহযোগিতা করেন গুলশান আক্তারের স্বামী অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মুহাম্মদ ফখরুল আলম। এ ছাড়া ছেলেমেয়েরা ছুটিতে বাড়িতে এসে তাকে বাগানের কাজে সহযোগিতা করেন। স্বামী ও সন্তানদের সহযোগিতায় ক্রমেই আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে বাগান। গুলশান আক্তার বলেন, ‘আমি ১৯৯৪ সালে সরকারি চাকরিতে যোগদান করি। তারপর থেকে গাছ লাগানোর এ শখ আমার নেশা হয়ে ওঠে। তখন থেকেই আমি কোথাও গেলে নতুন ফুলের গাছ দেখলে সংগ্রহ করতাম। স্বামী ও সন্তানদের সহযোগিতা আমার এই পথচলাকে সহজ করে দিয়েছে।’ রোধ হচ্ছে দূষণ গুলশান আক্তারের ছাদবাগানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বা টিনের পাত্রকে প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন আকারের টব বানানো হয় তার বাগানে। ছাদবাগানের জন্য জৈবসার নিজেই প্রস্তুত করেন। তিনি বলেন, ‘ফুলের বাগান বড় হতে থাকায় আমার মাথায় একটা আইডিয়া আসে। টাকা খরচ করে এতগুলো টব কেনার পরিবর্তে আমি সাংসারিক প্লাস্টিকের বিভিন্ন বর্জ্য ব্যবহার শুরু করি। প্লাস্টিকের বোতল, ঝুড়ির মতো ফেলে দেয়া প্লাস্টিকের বর্জ্য আমি ফুলের টব হিসেবে ব্যবহার করি। এতে একদিকে যেমন আঙিনা পরিষ্কার থাকে, তেমনি পরিবেশ দূষণও অনেক কমে আসে।’ প্রশিক্ষণ দেন বিনা মূল্যে  গুলশান আক্তার বাগান তৈরিতে আগ্রহীদের মাঝে তিনি বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শও প্রদান করেন। তিনি বলেন, ‘বাগান তৈরিতে আগ্রহীদের জন্য আমি বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। আমি চাই সবার বাসায় গড়ে ওঠুক এমন ছাদবাগান। এতে করে পরিবেশদূষণ কমবে এবং বৃদ্ধি পাবে সামাজিক বনায়ন।’ সন্তানেরা ভালো জায়গায় বৃক্ষ ও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষটি ব্যক্তিগত জীবনে তিন সন্তানের জননী। বড় ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে বর্তমানে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন। মেজো ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে অধ্যয়নরত এবং একমাত্র মেয়ে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। ভবিষ্যৎ ইচ্ছা  গুলশান আক্তার অল্প জায়গায় সুন্দর বাগান তৈরির গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, ‘শখের বাগানকে ছড়িয়ে দিতে চাই সবার মাঝে। সবাই যেন বাগান তৈরি করতে পারে সে জন্য আমার ব্যক্তিগত গবেষণা চলমান রয়েছে।’