ভারসাম্যহীন মেয়েটি ও প্রশাসনের দায়িত্ববোধ

জুলাই ৩০, ২০২১ | ৬:২২ অপরাহ্ণ
পপুলার বিডিনিউজ রিপোর্ট , পপুলার বিডিনিউজ

এ মাসের ২০/২১ তারিখের দিকে মতলব উত্তরের ষাটনল এলাকায় একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়েকে অসংলগ্ন অবস্থায় ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। মেয়েটি দিনে লঞ্চ ঘাট এলাকায় অবস্থান করত। উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে মতলব উত্তর উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ২৩/৭ /২০২১ তারিখে সন্ধ্যায় ফোন দিয়ে মেয়েটির কথা জানান। মেয়েটিকে নিয়ে কি করবো সেটা জানতে চান। এরপর আরো অনেক জায়গা থেকে ফোন আসা শুরু করে। সারাদেশে সর্বাত্মক লকডাউন সবে শুরু হয়েছে তখন। আমি তখন বেশ দূরের একটি বাজারে লকডাউন বাস্তবায়ন মনিটরিং করছি। স্পট থেকে বারবার ফোন দিয়ে একজন (নাম উল্লেখ করলাম না, সবাই চিনে যাবে) জানতে চাচ্ছিল কি করবে এই মেয়েটিকে নিয়ে উপজেলা প্রশাসন। তখন তাঁকে অনুরোধ করলাম যে উনি আপাততঃ একটু দায়িত্ব নিয়ে রাখবেন কিনা মেয়েটিকে। আগামীকাল সকালে কোনো একটা ব্যবস্থা করবো। উপজেলা প্রশাসন এর ব্যয় বহন করবে। উনি অপারগতা প্রকাশ করলেন। অথচ উনি খুবই দরদ দেখাচ্ছিলেন মেয়েটির জন্য। এরপর এগিয়ে এলেন ষাটনল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার এবং উদ্যোক্তা মিন্টু। তাদেরকে নির্দেশনা দেয়া হলো যে মেয়েটিকে ইউনিয়ন পরিষদে রাখতে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। গত সাতদিন তাঁরা গ্রাম পুলিশের সহায়তায় মেয়েটিকে খাবার দেয়া থেকে শুরু করে সব প্রয়োজন মিটিয়েছে। আমি যেহেতু পাবনা ডিসি অফিসে কর্মরত ছিলাম। আমি পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমার ব্যাচমেট Afroza Snegdha কে অনুরোধ করলাম যে পাবনা মানসিক হাসপাতালে মেয়েটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায় কিনা। তিনি মানসিক হাসপাতালে কথা বলে ব্যবস্থা করলেন। কিন্তু সেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হলে কিছু নিয়ম কানুন মানতে হয়। প্রথম যে বিষয়টি সামনে এলো তা হলো এই মেয়েটির একজন অভিভাবক লাগবে। এই মেয়ের অভিভাবক হিসেবে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে অভিভাবক এর মুচলেকা দিতে হয়। মজার বিষয় হলো অনেকে কেউ তখন এই অসহায় মেয়েটির পাশে দাঁড়ায়নি অভিভাবক হওয়ার জন্য। শেষমেষ মিন্টু রাজি হয়েছিলো অভিভাবক হিসেবে পাবনা যাওয়ার জন্য। করোনা টেস্ট ছাড়া হাসপাতালে ভর্তি নিবে না। মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য দফতরের ভাষাণ প্রায় এক ঘন্টা চেষ্টা করে এই মেয়েটির নমুনা সংগ্রহ করতে পেরেছিল। মেয়েটির ছবি প্রিন্ট করা হয়েছিল। সব কাজ যখন প্রায় শেষ সেই মুহূর্তে সুসংবাদটি দিলেন ষাটনল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শরীফ সাহেব। উনি গত রাতে কনফার্ম করলেন যে মেয়েটির বাড়ি নারায়ণগন্জ এর চাষারা এলাকায়। আজকে মেয়েটির বাবা এবং স্থানীয় একজন সাংবাদিক (যিনি মেয়েটির বাসার খোঁজ বের করেছেন) এসেছিলেন মেয়েটিকে নিয়ে যেতে। করোনা মহামারীর এই সময়ে চারদিকে এতো খারাপ খবরের মধ্যে আজকে মেয়েটি কে তার পরিবারের কাছে তুলে দেয়ার আনন্দ আজকে সবার চোখে মুখে দেখতে পেয়েছি। বিশেষ করে গত সাতদিন যারা মেয়েটিকে দেখা শোনা করেছেন। এই মহৎ কাজের জন্য সৃষ্টিকর্তা নিশ্চই তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিবেন। একটা বিষয় খেয়াল করলাম এই কয়েকদিনে। অনেকে এই ধরণের খবর দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের জাহির করার চেষ্টা করেছেন। বিগত কয়েকটা দিনে আমার কাছে কেউ খোঁজও নেয়নি মেয়েটার কি হলো। দায়িত্ব নেয়ার সময়ে এলেই সবাই কেমন আচরণ করে সেটিও দেখা গিয়েছে এই ঘটনায়। এ ওর ঘাড়ে দিতে পারলেই যেনো বেঁচে যায়। মানবিক বিষয় গুলো তখন কারো মধ্যে কাজ করে না..খুবই দুঃখজনক। তবে ষাটনল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বার, গ্রাম পুলিশ, উদ্যোক্তা সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। তাঁরা মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন। আর কৃতজ্ঞতা আমার বন্ধু পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এর প্রতি যিনি এই করোনা পরিস্থিতিজনিত ব্যস্ততার মাঝেও এই মেয়েটির ভর্তির ব্যবস্থা করেছিলেন পাবনা মানসিক হাসপাতালে। তিনি জানিয়েছেন মেয়েটির অভিভাবক যদি চায় তাহলে মেয়েটিকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা তিনি করবেন। সংগ্রহ।  মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ফেসবুক আইডি।