পবিত্র কুরআন সুন্নাহের আলোকে শবে বরাতের দলিল

পপুলার বিডিনিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ মার্চ ৭, ২০২৩ | ৭:২৪
পপুলার বিডিনিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ মার্চ ৭, ২০২৩ | ৭:২৪
Link Copied!

শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে ‘শবে বরাত’ বলা হয়। শবে বরাত কথাটি ফারসি থেকে এসেছে। শব মানে রাত, বরাত মানে মুক্তি; শবে বরাত অর্থ মুক্তির রজনী।

‘শবে বরাত’-এর আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাত’,লাইলাতম মুবারাকা। হাদিস শরিফে যাকে ‘নিসফ শাবান’ বা শাবান মাসের মধ্য রজনী বলা হয়েছে। তবে বিশ্ব মুসলমানের কাছে এ রাত ‘শবে বরাত’ নামেই বেশি পরিচিত।

শবে বরাত সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হা-মিম! শপথ! উজ্জ্বল কিতাবের। নিশ্চয়ই আমি তা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে। নিশ্চয় আমি ছিলাম সতর্ককারী। (সুরা দুখান, আয়াত: ১-৩)। এ আয়াতের তাফসির সম্পর্কে বরেণ্য মুফাসসির আল্লামা শেখ আহমদ ছাভী (রহ.) বলেন, ‘ঐ বরকতময় রজনী হচ্ছে অর্ধ শাবানের রাত। বিশিষ্ট তাবেয়ি হজরত ইকরামা (রা.) এবং অন্যান্য তাফসিরকারকদের মতও এটাই যে, সেই বরকতময় রাত হল মধ্য শাবান তথা শবে বরাত।’ (তাফসিরে ছাভী, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৪০)।
আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ.) এই আয়াতের তাফসিরে বলেন, ‘আর বরকতময় রাত হল লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান বা শাবানের মধ্য রাত তথা শবে বরাত। কেননা এই রাতে উম্মুল কিতাব কোরআন শরিফ সপ্তম আসমান থেকে দুনিয়ার আসমানে তথা প্রথম আসমানে নাযিল হয়েছে।’ (তাফসিরে জালালাইন, পৃষ্ঠা ৪১০)।

বিজ্ঞাপন

ইমাম আবু জাফর আত-তাবারি (রহ.) বলেন, ‘তাবেয়ি হজরত ইকরামা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মধ্য শাবানের রাত্রিতে বছরের সকল ব্যাপার চূড়ান্ত করা হয়, জীবিত ও মৃতদের তালিকা লেখা হয় এবং হাজিদের তালিকা তৈরি করা হয়। এ তালিকা থেকে পরবর্তীতে একজনও কমবেশি হয় না।’ (তাফসিরে তাবারী, খন্ড ১০, পৃষ্ঠা ২২)।

ইমাম কুরতুবী (রা.) বলেন, ‘এ রাতের ৪ টি নাম আছে- লাইলাতুম মুবারাকা, লাইলাতুল বারাআত, লাইলাতুছ্ ছাক, লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান।’
(তাফসিরে কুরতুবী, খন্ড ১৬, পৃষ্ঠা ১২৬)।

ইমাম বাগাভি (রহ.) লিখেন, ‘নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ শবে বরাতের রাতে সকল বিষয়ের চূড়ান্ত ফয়সালা করেন এবং শবে ক্বদরের রাতে তা সংশ্লিষ্ট দায়িত্ববান ফেরেশতাদের কাছে ন্যস্ত করেন।’
(তাফসিরে বাগাভি, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ২২৮)।

বিজ্ঞাপন

শবে বরাতের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে সহিহ হাদিস শরীফেও অনেক বর্ণনা এসেছে আম্মাজান হজরত আয়িশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (ﷺ)নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সেজদা করলেন যে আমার ধারণা হলো, তিনি ওফাত পেয়েছেন। আমি তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল; তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়িশা! তোমার কী এ আশঙ্কা হয়েছে? আমি উত্তরে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (ﷺ)! আপনার দীর্ঘ সিজদা দেখে আমার আশঙ্কা হয়েছিল, না জানি আপনি ওফাত পেয়েছেন? নবীজি (ﷺ) বললেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলই ভালো জানেন। তখন নবীজি (ﷺ) বললেন, এটা হলো অর্ধশাবানের রাত; এ রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন; ক্ষমাপ্রার্থীদের ক্ষমা করেন, অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন। (শুআবুল ইমান, তৃতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৮২)।

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে, নবীজি (ﷺ) এ রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করতেন। প্রিয়নবী (ﷺ) তাঁকে বলেছেন, এ রাতে বনি কালবের ভেড়া বকরির পশমের সংখ্যার পরিমাণের চেয়েও বেশিসংখ্যক গুণাহগারকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।
(তিরমিজি শরিফ, হাদিস নম্বর: ৭৩৯)।

একদিন প্রিয় নবী (ﷺ)
আম্মাজান আয়েশা (রা.)কে জিজ্ঞেস করলেন- হে আয়েশা! শাবান মাসের মধ্য রাতের মর্যাদা ও ফজিলত সম্পর্কে তুমি কী জান? তিনি আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ) শাবান মাসের মধ্য রাতের মর্যাদা কী? আল্লাহর হাবিব (ﷺ) উত্তরে বললেন- আগামী এক বছরে কতজন আদম সন্তান ভূমিষ্ট হবে এবং কতজন আদম সন্তান মৃত্যুবরণ করবে তা এ রাতে লিপিবদ্ধ করা হয়। আর এ রাতে তাদের আমল মহান আল্লাহ দরবারে উপস্থাপন করা হয় এবং তাদের রিযিক অবতীর্ণ কিংবা নির্ধারণ করা হয়।(ফাজায়েলুল আওকাত, হাদীস নম্বর ২৬)।

হযরত আবূ মূসা আশয়ারী (রা.) রাসূলে কারীম (ﷺ)হতে বর্ণনা করেন। রাসূলে পাক (ﷺ) এরশাদ ফরমান- মধ্য শাবানের রাত্রিতে আল্লাহ পাক রহমত নিয়ে আবির্ভূত হন এবং তার সমস্ত বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক বা শত্রুতাপোষণকারী ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না। (ইবনে মাজাহ, হাদীস নম্বর ১৩৮৯)।

হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম(ﷺ)বলেছেন, ১৪ শাবান দিবাগত রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখো; কেননা, এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে রহমত নিয়ে অবতরণ করেন এবং আহবান করেন; কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছ কি? আমি ক্ষমা করব; কোনো রিজিক প্রার্থী আছ কি? আমি রিজিক দেব; আছ কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি উদ্ধার করব। এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহবান করতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৮৪)।

তবে,
১) মুশরিক,
২) হিংসা পোষনকারী,
৩) সর্বদা ব্যভিচারকারী,
৪) পিতামাতার অবাধ্য,
৫) মদপানকারী,
৬) হারাম মাল ভক্ষণকারী,
৭) ইয়াতিমের সম্পদ আত্মসাৎকারী
এ রাতে ক্ষমা পাবেনা। তাদের তাওবা করতে হবে।

তাই আসুন!কুরআন তিলাওয়াত,জিকির-আজকার দুরুদ, সালাম মিলাদ, কিয়াম ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে শবে বরাতকে আমাদের মুক্তির এবং নাজাতের অসিলা বানিয়ে নিই। আগামী বছরের তাকদির যেনো আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য শুভ এবং সুন্দর করে দেন। সকল মুসলামান যেনো ভাই ভাই হয়ে জীবনযাপন করতে পারি, সেই তাওফিক আল্লাহ তায়ালা আমাদের দিন।

লেখক মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ মাছুম বিল্লাহ বাগদাদী মুহাদ্দিস দাসাদী ডি.এস.আই. এস. স্নাতকোত্তর কামিল(এম.এ) মাদ্রাসা চাঁদপুর।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:

ট্যাগ:

শীর্ষ সংবাদ:
শেখ হাসিনা ভারতে আছেন থাকবেন রাতেই কুমিল্লা’সহ দশ অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টির আভাস দুই ঈদে ১১ দিন ও দুর্গাপূজায় ছুটি মিলবে দুই দিন ১৫ বছর দেশের সব মানুষ নির্যাতিত ছিল: জামায়াত আমির স্বামীর কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন মতিয়া চৌধুরী চাঁদপুর কারাগারের সাজাপ্রাপ্ত আসামির মৃত্যু হালাল উপার্জন অল্প হলেও বরকত থাকে: মিজানুর রহমান আজহারী পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীদের ব্ল্যাকআউট, ‘কমপ্লিট শাটডাউনের’ আলটিমেটাম চাঁদপুরে ২৬ জেলে আটক: ১৭ জনের একমাসের কারাদণ্ড  ২০২৫ সালের সরকারি ছুটির তালিকা প্রকাশ সাকিবকে নিয়েই বাংলাদেশের দল ঘোষণা বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক মানা নিয়ে যা বললেন উপদেষ্টা নাহিদ ঢাবি ক্যাম্পাসে হেঁটে হেঁটে গ্রাফিতি দেখলেন ড. ইউনূস সম্পত্তিগত বিরোধ: মতলব উত্তরে ছেলের ছুরিকাঘাতে বাবা নিহত চাঁদপুরে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ১৮ হাজার টাকা জরিমানা চাঁদপুরে ১৫ দিনে সাপের কামড়ে আহত অর্ধশত, একজনের মৃত্যু  এক দফা দাবিতে বাংলাদেশ মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির আন্দোলন হাজীগঞ্জের বড়কুল পুর্ব ইউনিয়ন আইডিয়াল ক্লাব ও পাঠাগারের উপদেষ্টা ও কার্যকরি কমিটি গঠন হাজীগঞ্জে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার ও লাইসেন্স নবায়ন না করায় তিন প্রতিষ্ঠানে জরিমানা হাজীগঞ্জে গাছ থেকে পড়ে ও পানিতে ডুবে শিশু’সহ দুই জনের মৃত্যু